মূল বিষয়ে

উইন্ডোজ কী এর নাম কী?

লেখক

বিদেশি

একটা বাধাহীন মুক্ত সিস্টেম চালানোর সময়ও যদি চোখের সামনে কীবোর্ডের ওপর উইন্ডোজ লোগোটা ভাসতে থাকে, তাহলে অতিষ্ঠ হয়ে অন্তত লোগোটা মুছে ফেলা সম্ভব; কিন্তু তারপরেও বোতামটার কথা বলতে গেলেই উইন্ডোজের নাম নেয়া হয়ত অস্বস্তির কাজ। এই ঝামেলা থেকে রেহাই দেবার জন্য মাইক্রোসফ্টের বাইরে তাদের উইন্ডোজ লোগো কী টাকে Super, এবং Mod4 এই দুই বিকল্প নামে ডাকা হয় (সুপার বেশি প্রচলিত)। এই নাম কিন্তু shuf কমান্ডে লটারি করে পাওয়া না, এর পেছনে রীতিমত ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে।

Mod হচ্ছে Modifier এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কীবোর্ডের যে বোতামগুলি অন্য বোতামের স্ক্যান কোড1 মডিফাই করতে পারে তারাই হচ্ছে মডিফায়ার। যেমন, শিফ্ট এর কথাই ধরা যাক: কোনো অক্ষরের কী প্রেস করলে কীবোর্ড কম্পিউটারে যে স্ক্যানকোড পাঠায়, শিফ্ট চেপে ধরলে পাঠায় তার চেয়ে ভিন্ন একটা কোড, ফলে কম্পিউটার বড়হাতের অক্ষরটা দেখায়, অর্থাৎ মডিফাই হয়ে গেল। একইভাবে অল্টারনেট (Alt), কন্ট্রোল (Ctrl) প্রভৃতির সাহায্যে স্ক্যানকোড পরিবর্তন করে একই বোতামে একাধিক ফাংশনালিটি (শর্টকাট) পাওয়া যায়। এইসব চেনাজানা শিফ্ট, কন্ট্রোল, অল্ট এর মতই আরেকটা মডিফায়ার হচ্ছে উইন্ডোজ কী, চার নম্বর মডিফায়ার কী, Mod42

সুপার নামটার ইতিহাস বেশ মজাদার। প্রাগৈতিহাসিক কালে ১৯৭০-৮০ এর দশকে জটিল কম্পিউটিংয়ের জন্য লিস্প মেশিন নামের এক জাতের শক্তিশালী ওয়ার্কস্টেশন কিছুকাল তুমুল জনপ্রিয় ছিল। কাজের প্রয়োজনে এদের কীবোর্ডে স্বাভাবিক টাইপিং বোতামগুলির পাশাপাশি বেশ কিছু, বেঽঽঽশ কিছু, অতিরিক্ত ফাংশনাল ও মডিফায়ার কীও ছিল; আজকের শিফ্ট, কন্ট্রোল থেকে শুরু করে পরে মেটা, সুপার, এমনকি হাইপার পর্যন্তও! সেকালের একটা লেজেন্ডারি কীবোর্ডের ছবিতেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে।

সিম্বলিক্‌স এলএম‑২ মেশিনের “স্পেস ক্যাডেট” কীবোর্ড [উৎস: উইকিপিডিয়া]

পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে, প্লাটফর্মের প্রয়োজন (বা নিষ্প্রয়োজন) এর ভিত্তিতে, ওই অতিরিক্ত কীগুলির অবস্থান ও সংখ্যায় ক্রমপরিববর্তন হয় এবং একসময় কন্ট্রোল, শিফ্ট এসব হাতেগোনা কয়েকটা বাদে বাকি বোতামগুলো বিলুপ্তই হয়ে যায়। শেষমেষ ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি লিস্প মেশিনগুলোই গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। তবে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে না পারলেও তাদের একটা লিগেসি রয়ে গেছে; অনেক স্বনামধন্য টেক গুরুদেবদের 3 হাতেখড়ির প্রথম হাতিয়ার না হলেও তাদের অনেকের তারুণ্যের যৌবনের ক্রাশ ছিল নিশ্চই ওই জটিল মেশিন এবং তাদের সুগঠিত কীবোর্ডগুলো। ১৯৮০ এর মাঝামাঝি যখন এক্স ডিস্‌প্লে সার্ভার প্রকল্পের শুরু হয়, তখন এর ডেভলপাররা তাদের কীবোর্ড ইন্টারফেসে লিস্প মেশিনের মেটা, সুপার, হাইপার ইত্যাদি বাটনের স্ক্যানকোডগুলিও যোগ করে দেয়, যদিও সেগুলি ওইসময় দুর্লভ হয়ে উঠছিল।

[উৎস: https://​trmm​.net/​S​y​m​b​o​l​ics]

সে সময়ই আইবিএম আর মাইক্রোসফ্টের হাত ধরে আজকের আদর্শ কীবোর্ড—আইবিএম‑পিসি কম্পাটিবল— জনপ্রিয় হচ্ছিল। তবে এই লেআউটের নতুন সংযুক্তি উইন্ডোজ লোগো কী এর সমতুল্য কোন স্ক্যানকোড অন্যান্য ওএসে ছিল না। তাই লিগেসি কীবোর্ডের কোন বিলুপ্ত মডিফায়ারকে এর কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়।

এক্ষেত্রে অবস্থানের ভিত্তিতে উইন্ডোজ কী এর জন্য আদর্শ ক্যান্ডিডেট বোতাম হচ্ছে লিগেসি কীবোর্ডের স্পেসবারের পার্শবর্তী কন্ট্রোল, মেটা অথবা সুপার। এদের মধ্যে মেটা এর আসন নিয়েছে আধুনিক অল্ট4, আর কন্ট্রোল তো স্বনামে বহাল, কাজেই ক্যান্ডিডেট হিসাবে বাকি থাকলো কেবল সুপার। তাই এটাই হল উইন্ডোজ কী এর উপযুক্ত জায়গা। এইজন্যই আমরা এখন উইন্ডোজ লোগো বোতামটাকে আদর করে সুপার কী বলে ডাকি, আর শিরিষ কাগজ ঘষে বাপের নাম ভুলিয়ে দিই আদর করে শিরিষ কাগজ দিয়ে ম্যাসাজ করিয়ে যত্ন নিই।

তথ্যসহায়িকা

https://​en​.wikipedia​.org/​w​i​k​i​/​A​l​t​_​key
http://​xahlee​.info/​k​b​d​/​s​p​a​c​e​-​c​a​d​e​t​_​d​e​s​i​g​n​.​h​tml
https://​catonmat​.net/​w​h​y​-​e​m​a​c​s​-​u​s​e​s​-​m​e​t​a​-​key
https://​en​.wikipedia​.org/​w​i​k​i​/​S​p​a​c​e​-​c​a​d​e​t​_​k​e​y​b​o​ard
https://​en​.wikipedia​.org/​w​i​k​i​/​S​u​p​e​r​_​k​e​y​_​(​k​e​y​b​o​a​r​d​_​b​u​t​ton)
https://​wiki​.archlinux​.org/​i​n​d​e​x​.​p​h​p​/​x​m​o​d​m​a​p​#​M​o​d​i​f​i​e​r​_​k​eys
https://​en​.wikipedia​.org/​w​i​k​i​/​L​i​s​p​_​m​a​c​h​i​n​e​#​H​i​s​t​o​r​i​c​a​l​_​c​o​n​t​ext


  1. স্ক্যান কোড হচ্ছে সহজ কথায় একেকটা বোতামের জন্য কীবোর্ড থেকে কম্প্যুটারে পাঠানো ইলেক্ট্রনিক সিগনাল। কম্প্যুটার এই স্ক্যানকোড দেখে বুঝতে পারে কোন কোন কী প্রেস করা হয়েছে। কীবোর্ড কন্ট্রোলার বোর্ডের রো আর কলাম স্ক্যান করে প্রেস করা কী খুঁজে বের করে বলেই একে স্ক্যান কোড বলে।
  2. মডিফায়ারগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটা বোতাম সুনির্দিষ্ট আদর্শ নাম পেয়ে গেছে কীবোর্ডের বিবর্তনের শুরুর দিকেই; পরবর্তী বোতামগুলিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ও কাজে চালাতো, তাই ঝামেলা না করে তাদের Mod# জাতীয় নামে শ্রেনীভুক্ত করা হয়। ক্রমটা এরকম: শিফ্ট, ক্যাপস, কন্ট্রোল, Mod1=অল্টারনেট, Mod2=নাম্বারলক, Mod3= [it’s a secret!], Mod4=উইন্ডোজ/সুপার, Mod5=অল্ট.গ্রাফিক(altgr)
  3. উল্লেখ্য, রিচার্ড স্টলম্যান আর গাই স্টীল এমআইটির এআই ল্যাবে লিস্প মেশিনে কাজ করতে করতেই ইম্যাক্স তৈরি করেন
  4. Alt নামের বোতাম পুরাতন কীবোর্ডেও দেখা যায়, তবে তার কাজ এবং পুরো নাম ছিল বর্তমান অল্ট কী থেকে ভিন্ন: Alt Mode, কিবোর্ড ইনপুটের একরকম এসকেপ ক্যারেক্টার । বরং আজকের অল্ট কী আর পুরাতন মেটা কী একই ধরণের কাজ করত এবং অবস্থানও প্রায় একই, তাই অল্ট কী এই বোতামটাকেই প্রতিস্থাপন করেছে— তবু কোনো ঐতিহাসিক কারণে মেটা নামটা গ্রহণ করেনি। অবশ্য কথায় না চললেও, বিভিন্ন প্রোগ্রামের কনফিগারেশন ফাইলে অল্ট কী এর কোড হিসাবে এখনও “M” ব্যবহৃত হয়, যা মেটার সাথে অল্টের সুপ্ত সম্পর্কের নিরব সাক্ষী। এক্ষেত্রে ইম্যাক্সের কথা বিশেষত বলতে হয়; এখনও সে মেটার বিরহে যেখানে সেখানে M‑x M‑x M‑x ডাক ছেড়ে রোদনে ব্যস্ত হয়

আগের লেখা

জিপিজি ওয়েব কী ডিরেক্টরি

পরের লেখা

আর্চলিনাক্সের কাস্টম প্যাকেজ রিপোজিটরি

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।